আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


গোপালপুর পৌরসভার ৪২ বছর; নির্বাচন জমে উঠেছে গ্রাম-মহল্লায়, চলছে রাজনৈতিক গ্রুপিং ও লবিং

নিজস্ব সংবাদদাতা :

Pourashova-Photo-Gopalpur-Tangail 28.11.2015 copy
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গোপালপুর পৌরসভা। গোপালপুর সদর ও সূতি ইউনিয়ন নিতে গঠিত হয় এ প্রাচীন পৌরসভা। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক মহকুমা শহরেও তখন পৌরসভা ছিলনা। পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে সকলকেই স্মরণ করতে হবে সাবেক এমপি এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মরহুম হাতেম আলী তালুকদারকে। কথিত আছে, হাতেম আলী তালুকদার গোপালপুরকে পৌরসভায় রুপান্তরিত করার প্রস্তাব নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অফিসে গেলে তিনি প্রস্তাব শুনে হতভম্ব হয়ে মুখে কলম কামড়াতে থাকেন। বলেন, ‘হাতেম দেশের অনেক মহকুমা শহর এখনো পৌরসভায় রুপান্তরিত হয়নি। আর তুই এসেছিস অজপাঁড়া গোপালপুরকে পৌরসভায় পরিনত করতে। এত বুদ্ধি কোথায় রাখিসরে হাতেম?’ হাতেম তালুকদার ছাড়বার পাত্র ছিলেন না। গোঁ ধরে বসে থাকেন। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে ফোন করিয়ে ফাইল সই করানোর ব্যবস্থা করেই তবে বঙ্গবন্ধুর অফিস ছাড়েন হাতেম আলী তালুকদার। ১৯৭৫ সালে এ প্রতিবেদক গোপালপুর কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় ওই সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে কলেজ মাঠের আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষনে থানা আওয়ামীলীগের তদানিন্তন সভাপতি আমজাদ হোসেন ঢাল্লা মিয়া (বাড়ি মুশুদ্দী ইউনিয়নের শয়া গ্রামে। তখন মুশুদ্দী ইউনিয়ন গোপালপুর থানার অধীন ছিল) ওই ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন।
গোপালপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন হাতেম আলী তালুকদারের জ্যাষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান দুদু এবং সূতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কছিম উদ্দীন। মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম আক্তার মুক্তার বাবা। মেয়র প্রার্থী কছিম উদ্দীন খুবই সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। আওয়ামীলীগ করতেন। হাতেম আলী তালুকদারের ভক্ত ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে এমপি পুত্রকে ছাড় দিতে রাজী ছিলেন না। তিনি তদানিন্তন সিও অফিসের (তখন ইউএন অফিসকে সিও অফিস বলা হতো) এক অনুষ্ঠানে হাতেম আলী তালুকদারকে পুত্রের জন্য মাঠে না নামার অনুরোধ জানান। হাতেম আলী তালুকদার কথা রেখেছিলেন। পুত্রের জন্য নির্বাচনী মাঠে নামেননি। অনেকেই মনে করেন গোপালপুরকে পৌরসভায় রুপান্তরিত করা এমন কি কঠিন কাজ ছিল?। এখনতো হরহামেশা ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটবাজারকে পর্যন্ত পৌরসভায় পরিণত করা হচ্ছে? কিন্তু আজ থেকে ৪২ বছর আগে এটি সত্যিই কঠিন কাজ ছিল। অনেক মহকুমা শহর বাদ রেখে গোপালপুরের মত একটি অনুন্নত জনপদকে পৌরসভায় পরিনত করায় পত্রপত্রিকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বিশেষ করে ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সেই কঠিন সময়ে গোপালপুরকে পৌরসভা করে সরকারি কোষাগার থেকে বাড়তি বাজেট আনা সহজতো অবশ্যই ছিলনা। ৭৫ সালে দেশ জুড়ে আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আন্দোলন করছিল। গোপালপুরে জাসদের নেতৃর্ত্ব ছিলেন এডভোকেট কে এম আব্দুস সালাম, সূতির রফিউদ্দীন হুমায়ুন, হেমনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা সোহরাব হোসেন, গনিপুর গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। জাসদের সশস্ত্র গণবাহিনী মাঠেময়দানে নেমে শ্রেণী শত্রু খতমে ব্যস্ত ছিল। সেই অস্থির সময়ে ১৪ আগস্ট ছিল গোপালপুর পৌরসভার নির্বাচন। পৌর নির্বাচনের দিন বিকালে পালপাড়া স্কুল কেন্দ্রে জাসদের গনবাহিনীর সদস্যরা কর্তব্যরত দুই পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে দুটি রাইফেল ছিনিয়ে নেয়। ভোটে বেশ প্রতিদ্বন্ধিতা হয়। রাত ৮টার মধ্যে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষিত হয়। মতিয়ার রহমান দুুদু মেয়র নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যান হন ডুবাইলের আব্দুল জব্বার। পর দিন বিজয় মিছিল ও গণ সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে গভীর রাতে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা যার যার বাড়ি ফিরে যান। আর সেই রাতেই ঘটে ইতিহাসের নির্মম ও নৃশংস ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ওই দিন শেষ রাতে (১৫ আগস্ট ভোর রাতে) ঘাতকের হাতে সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন। এ জন্য গোপালপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনের সাথে ইতিহাসের ওই শোকাবহ ঘটনা জড়িয়ে আছে। এরপর বৈরান দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। জন্ম নিয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। রাজনীতি করার অধিকার পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তবে হঠকারি জাসদ চলে গেছে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর গোপালপুরে ভাসানী ন্যাপসহ বাম রাজনীতির কয়েকজন ধারক এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোষ্ঠির প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে গড়ে তোলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। পরে জাসদের একটি অংশ এতে যোগ দিলে বিএনপি শক্তিশালী ¯্রােতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে পৌর মেয়র পদে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের আব্দুল জব্বার, বিএনপির খন্দকার আব্দুল মান্নান, খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম রুবেল, আব্দুল কাদের কবীর উজ্জল। সব চেয়ে বেশিবার নির্বাচিত হন আব্দুল জব্বার। তিনি দুই বার ভাইস চেয়ারম্যান এবং তিনবার পৌর মেয়র ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম রুবেল নির্বাচিত হন দুইবার। তবে পৌরসভায় বেশি উন্নয়ন কর্মকান্ড হয় আব্দুল কাদের কবীর উজ্জলের সময়। গোপালপুর পৌরসভা নির্বাচনে জনগনের রায় পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিরোধী দলের প্রার্থীরা অধিকাংশবার বিজয় হয়েছে। যেমন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে আব্দুল জব্বার, জাতীয় পার্টির শাসনামলে খন্দকার আব্দুল মান্নান, আওয়ামীলীগের শাসনামলে জাহাঙ্গীর আলম রুবেল এবং বিএনপির শাসনামলে ২০০৪ সালে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হন আব্দুল কাদের কবীর উজ্জল। অবশ্য সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী হয়ে একবার করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মতিয়ার রহমান, আব্দুল জব্বার এবং জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। এবার দল সমর্থিত নয়- সরাসরি দলের প্রতীক নিয়ে পৌর নির্বাচন হচ্ছে। এবারো নির্বাচনে মাঠ গরম করছেন আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক রকিবুল হক ছানা। দলের গ্রিন সিগনাল নিয়ে মাঠ গোছাচ্ছেন বর্তমান পৌর মেয়র এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। অপর হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল কাদের কবীর উজ্জল বসে নেই। তিনিও মাঠে নেমেছেন। বিএনপির মনোনয়ন না পেলে তিনি সম্ভবত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন। ভোটারদের একটি অংশের উপর তার প্রভাব বলয় রয়েছে। বসে নেই উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কে এম গিয়াস উদ্দীন। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এজন্য ক্ষোভ রয়েছে। ১৯৮৮ সালে এরশাদের শাসনামলে উপজেলা আওয়ামীলীগের তদানিন্তন সম্পাদক এবং মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দার আলী তালুকদার (বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হালিমুজ্জামান তালুকদারের বড় ভাই) জাসদ ও জাপার সন্ত্রাসীদের হাতে পৌরশহরে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলে ইঞ্জিনিয়ার কে এম গিয়াস উদ্দীন আওয়ামীলীগের দুর্দিনে দলের হাল ধরেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অপরদিকে নব্বয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতা এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সম্পাদক রকিবুল হক ছানা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার মোটামুটি নিশ্চয়তা পেয়ে মাঠে বিরামহীনভাবে কাজ করছেন বলে জানান আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রকিবুল হক ছানা ইতিপূর্বে মেয়র পদে দুই দুইবার নির্বাচনে লড়ে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। স্থানীয় সাংসদের কৃপা নজর তার উপর রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শুধু মাত্র দলীয় কোন্দেলেই গত দুই নির্বাচনে তিনি হেরেছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারনা। এবার দল মনোনয়ন দিলে সকলকে এক সাথে কাজ করার বাধ্যবাধকতা থাকায় দলীয় প্রার্থীর পেছনে (মনোনয়ন যিনিই পান) ছুরি মারার সুযোগ থাকবেনা বলে অনেকে মনে করেন। এছাড়াও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্র নেতা সাইফুল ইসলাম তালুকদার সুরুজ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, শহর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আল মামুন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এনামুল হক, গোপালপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন, যুবলীগ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান আজাদ। অপরদিকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসাবে সম্ভবত থাকছেন বর্তমান পৌর মেয়র অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। সাবেক উপমন্ত্রী ও গ্রেনেড হামলা মামলায় অন্তরীন আব্দুস সালাম পিন্টু এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর আস্থাভাজন হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলম রুবেলের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার জানিয়েছেন রুবেল ভক্তরা। বিএনপির মনোনয়ন যদি জাহাঙ্গীর আলম রুবেল পান, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন যদি রবিকুল হক ছানা পান এবং যদি আব্দুল কাদের কবীর উজ্জল স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তবে এবারো ত্রিমুখি প্রতিদ্বন্ধিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি এবং তবে শব্দের মিলন ঘটলেই ওরকম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয়। মনোনয়ন সংগ্রহ, যাছাইবাছাই এবং দলীয় সিদ্ধান্তের পরই জানা যাবে নিরপেক্ষ ভোট হলে কার ভাগ্যের চাকা সামনে আগাবে।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!